1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এই শিব মন্দিরটি আজ থেকে শত শত বছরের পুরনো।

  • প্রকাশের সময় বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০২০
  • ৭৫ বার সংবাদটি পাঠিত

তাসনিয়া ঐশি, জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ প্রাচীন ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির খোঁজে ঘুরে বেড়ান যারা তাদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ শত বছর আগে নির্মিত জয়পুরহাটের বারো শিবালয় মন্দির। শান্ত সবুজ পরিবেশ আর ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন স্থাপত্য টি জুড়ে রয়েছে মন্দির।জয়পুরহাট সদর থেকে তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর তীরে বেল-আমলা গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা নিভৃত স্থানে ১২টি শিবমন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলি কোন যুগে এবং কার দ্বারা নির্মিত তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মন্দিরের গঠন প্রণালী ও নির্মাণশৈলী দেখে ধারণা করা হয় এগুলি সেন যুগে নির্মিত। কারণ সেন রাজা বল্লভ সেন ছিলেন শিবের উপাসক তথা শৈব। এতদঞ্চলে সেন রাজাদের আরো কিছু কীর্তি রয়েছে। যেমন পাঁচবিবির লকমা রাজবাড়ি ও পাথরঘাটা। এ থেকে ধরে নেয়া যায় যে, রাজা বল্লাল সেন শিব উপাসনার জন্য এখানে এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন। বারো শিবালয় মন্দিরের অবস্থান জয়পুরহাটের বেলআমলা গ্রামে। বারোটি শিবমন্দির প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষ্য বহন করে আজো দাঁড়িয়ে আছে। আবার কারো কারো মতে, ইতিহাস পরিচিত জগৎ শেঠের বিত্তবান ছিলেন লোচন মন্ডল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি যিনি বারো শিবালয় মন্দিরটি নির্মাণ করেন।বলা হয়ে থাকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে অথবা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজীব লোচন মণ্ডল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার বেল আমলা গ্রামে ‘বারো শিবালয় মন্দির’ নির্মাণ করেন। তার অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যের কারণে তাকে মুর্শিদাবাদের তৎকালীন ধনাঢ্য ব্যাক্তি জগৎশেঠের সাথে তুলনা করা হতো। আবার এও বলা হয়ে থাকে যে রাজা বল্লাল সেন শিবের উপাসক ছিলেন বলে তিনি এই মন্দির স্থাপন করেন। জয়পুরহাটের বারো শিবালয় শিবমন্দিরটি প্রাচীন স্থাপত্যের নৈপূণ্যে আজো দাঁড়িয়ে আছে। যার সংখ্যা বারোটি। একই আঙ্গিনার চারপাশে গায়ে গায়ে প্রায় ঠেকানো এই মন্দিরগুলো বেল আমলা বারো শিবালয় নামেই পরিচিত। এটি মারোয়ারী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থস্থান। সাধারণতঃ একই স্থানে পূজা অর্চনার জন্য একটি মন্দির থাকে। বারো শিবালয়ের সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ অবস্থা পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয় যে রাজা বল্লাল সেন (শিব শিবের) উপাসক ছিলেন বলেই তিনি এই মন্দির স্থাপন করেন। আর কারো কারো মতে, ইতিহাস পরিচিত জগৎ শেঠের বিত্তবান ছিলেন লোচন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি যিনি বারো শিবালয় মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বেলআমলা হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য মতে এবং সেখানে থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন প্রকার চন্ডীমূর্তি, সূর্যমুক্তি, বাসুদেবমুর্তি দেখে ধারণা করা হয় এককালে এখানে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও তীর্থ স্থান ছিল। রাজীব লোচনা মন্দলের বংশের অধস্তন জ্ঞান্দ্রেনাথ চৌধুরী একসময় এখানকার বিশাল জমিদারির মালিক ছিলেন। পরে (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি) কর্তৃক জমিদারি নিলামে উঠার পর থেকে বেলআমলা গ্রামে জমিদারির পতন হয়। পর্যায়ক্রমে গতিনাথ দত্ত চৌধুরী ও তার পুত্র গিরীলাল দত্ত চৌধুরীর সময় জমিদারি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু কি কারণে একই জায়ঘায় এতগহুলো শিব মন্দির নির্মিত হলো, সে কথা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। সেদিক থেকৈ ধর্মপ্রাণ মারোয়ারী ও হিন্দু নর-নারীর জন্য বারো শিবালয় মন্দিরটি এক আলাদা গুরুত্ব বহন করে। জয়পুরহাট শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দৃষ্টি নন্দন এই বারো শিবালয় মন্দিরটি বেল আমলায় অবস্থিত। প্রায় এক হাজার বছর পূর্বে ভারতের মুর্শিদাবাদের জমিদার রাজীব লোচন এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। মন্দিরটি নির্মাণের নির্দিষ্ট কোন উদ্দ্যেশ্য জানা না গেলেও এর উচু চ‚ড়া মালার সৌন্দর্য্য শুধ ধর্ম প্রাণ মারোয়ারী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেই কাছে টানেনা বরং সকল ধর্মের মানুষকেই আকৃষ্ট করে। বারো শিবালয় মন্দির ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীন এই স্থাপনাটি স্থানীয় মারোয়াড়ী এবং হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান। এই মন্দিরের গঠন ও নির্মাণ প্রণালী দেখে মনে হয় এটি সেন যুগে তৈরি। দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্য রীতিতে তৈরি এই শিব মন্দির উপমহাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। নানা আকৃতির নকশা করা ইট এবং কারুকার্য শোভিত পোড়ামাটির ফলক এবং নানা দেয়াল চিত্র চোখে পোড়ে এই মন্দিরের নির্মাণশৈলীতে। প্রতি পাশে ২টি করে ৪ পাশে ৮টি এবং পচার কোণায় ৪টি সহ মোট ১২টি মন্দির রয়েছে এখানে। প্রবেশের জন্য উত্তর ও পশ্চিম দিকে ২টি করে প্রবেশ পথ রয়েছে। উঁচু মঞ্চের ওপর স্থাপিত প্রত্যেকটি মন্দিরে রয়েছে খিলান আকৃতির একটি করে দরজা। প্রতিটি মন্দিরেই ১টি করে কালো পাথরের শিবলিঙ্গ বেদিমূলের উপর স্থাপিত। মাঝখানে যে মন্দির আঙ্গিনা রয়েছে এর মধ্যখানে একটি নন্দী-মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ফাগুনমাসের চতুর্দশীতে শিবরাত্রি এ বারো শিবালয়কে ঘিরে পূজা অর্চনা হয়। শিবরাত্র উপলক্ষে হয় বিশাল মেলা। মেলায় মানত, শিবদর্শন, গীতা পাঠ, উলুধ্বনি। ঢাক ঢোলের বাজনায় সারা এলাকা মুখরিত হয়। এছাড়া মেলায় দেশেল সুখ-সমৃদ্ধি ও মানব কল্যাণে শিবঠাকুর কে সন্তষ্ট করতে আলো আধারির মাঝে কীর্তন গানের অনুষ্ঠান করা হয়। মেলায় শাখা-সিদূর, পৈতা, তিলক, পুতির মালা, কাঠের জালি, পুতুল খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিষপত্রসহ, বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র বেচা কেনা জমে উঠে। বিভিন্ন পূজা-পার্বনে ব্যাপক ভক্ত সমাগমের কথা বিবেচনা রেখে তৈরী করা হয় মন্দির প্রাঙ্গনের দক্ষিণ ভিটায় ৫টি কক্ষের বেশ বড় অতিথিশালা, পশ্চিম ভিটায় রন্ধনশালা ও মাঝখানে একটি হোমঘর। এছাড়াও এখানে শ্রাবন মাসের শেষ সোমবার শেলায় পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জেলাসহ ভারত থেকে মারোয়ারী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা কাউর তুলে শিবের মাথায় পানি ঢালে। অতপর পূজা অর্চনা শেষে তারা গঙ্গার জলে পুন্ন্য স্নান সেরে বাড়ি ফেরে। সৌন্দর্য, পিয়াসী এবং পর্যটকসহ অসংখ্য মানুষকে প্রতিনিয়িত কাছে টানে জয়পুরহাটের এই প্রাচীন বারো শিবালয় মন্দিরটি।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION