আবু সাঈদ হেলাল,যবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজ ল্যাবেই জিনোম সিকুয়েন্স করতে সক্ষম হলো যবিপ্রবি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সিকুয়েন্স করালেও নিজস্ব সিকুয়েন্স মেশিনেই তা করতে সক্ষম হলো যবিপ্রবি।
অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, শিক্ষক যবিপ্রবি তিনি বলেন, একদিকে জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমরা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে করোনা পরীক্ষা শুরু করি, এর পাশাপাশি গবেষণাও চলছে। বাংলাদেশের জিনোম সিকুয়েন্স নিয়ে আমাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিতও হয়েছে এ ক্যাটাগরির আন্তর্জাতিক জার্নালে। আরো অন্যান্য গবেষণার কাজও চলছে, বেশ কিছু কাজ আন্তর্জাতিক জার্নালে রিভিউ এ আছে।
ঢাকার বাইরে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সিকুয়েন্স করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হলো। নানা প্রতিকূলতা ও সংকটের মধ্য দিযে আমাদের গবেষণা করতে হয়। সিকুয়েন্সের জন্য প্রয়োজনীয় রিএজেন্টের দামও অনেক। এসব নিয়ে ব্যবসাও চলছে। আমাদের বলা হয়েছিলো এই সার্স কোভি-২ এর জিনোম সিকুয়েন্স করতে আমাদের আরো ৩৬ লাখ টাকার রিএজেন্ট কিনতে হবে। অথচ আমরা সেদিকে কর্ণপাত না করে ল্যাবে মেটাজিনোম সিকুয়েন্সিং এর যেসব রিএজেন্ট ছিলো, তা দিয়ে বাইরের কারো সাহায্য না নিয়ে নিজেরাই সিকুয়েন্স করে সারাস কোভি-টু এর জন্য হাই কোয়ালিটি ডাটা পেয়েছি। রাতের পর রাত জেগে আমরা মেথডকে প্রয়োজনমত ইমপ্রোভাইজ করেছি বেসিক নলেজ ও দু’তিনবার মেশিন রান করার ট্রেনিংকে সম্বল করে। রাতের পর রাত জেগে আমরা আলোচনা করেছি, ট্রাবলশ্যুট করেছি, এবং প্রতিটি ধাপে আমাদের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করেছি ও সফল হয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা বাগেরহাট, নড়াইল ও ঝিনাইদহের তিনটি স্যাম্পল থেকে ভাইরোসের হোল জিনোম সিকুযেন্স করেছি। সিকেুয়েন্সগুলো এখন জিআইএসএআইডি’র এর ডাটাবেজে পাওয়া যাচ্ছে।
আমাদের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন নিজেই একজন স্বনামধন্য মাইক্রোবায়োলজিস্ট হওয়ায় এবং নিজে ক্যান্সারের রোগী হয়েও এই সময়ে করোনা পরীক্ষা ও গবেষণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় আমাদের কাজটি সহজ হয়েছে। মূলত তারই আগ্রহে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোম সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, যে কারণে আমরা এই দুর্দিনে দেশের জন্য কিছু কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। এই জিনোম সেন্টারের এসোসিয়েট ডিরেক্টর, যবিপ্রবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ইকবাল কবির জাহিদ দিন রাত আমাদের উৎসাহিত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে কাজগুলো তুলে এনেছেন। আর সিকুয়েন্সের কাজে আমাদের টিমের প্রত্যেকের, বিশেষত ড. হাসান আল ইমরান ভাই, রুবায়েত, সাজিদের পরিশ্রম ছিলো অসামান্য, তাদের সবার কাছ থেকে আমি শিখেছি। তবে কোন কিছুই সম্ভব হতো না যদি না ড. সেলিনা, ড. নাজমুল, ড.শিরিন, ড.তানভীর, প্রভাস, শোভনসহ আমাদের টিমের শিক্ষক গবেষকরা করোনা ভাইরাস সনাক্ত ও নিউক্লিক এসিড এক্সট্রাকশনে ভূমিকা না রাখতেন। আমাদের গ্রাজুয়েটরাও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রচন্ড পরিশ্রম করছেন। সব মিলিয়ে এটি একটি টিমওয়ার্ক। আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে, পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে টিমের প্রতিটি সদস্য যে কী পরিমাণ পরিশ্রম করে এ পর্যন্ত ৫০০০ এর অধিক নমুনা পরীক্ষা করেছেন ও গবেষণা করছেন রাতের পর রাত জেগে, তা সামনাসামনি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই স্পিরিটেড টিমের সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত। আর এই টিমের বাইরেও অনেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে, উৎসাহ দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ।
আমরা প্রত্যেকেই এখন আত্মবিশ্বাসী যে, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও উচ্চমানসম্পন্ন ল্যাবরেটরি (বিএসএল-৩ মানের) প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আমরা এই ভাইরাসসহ অন্যান্য ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণাকে আরেক ধাপে উন্নীত করতে পারব এবং ভ্যাক্সিন তৈরিসহ ভাইরাসসৃষ্ট মহামারী মোকাবেলার কার্যকরী উপায় নিয়ে আরো কার্যকর গবেষণা করতে পারব। গবেষণার এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা এই মহামারীর সময়ে নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলার কিছু নেই।