আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ কেশবপুর উপজেলার বাগদহা গ্রামের উদ্যামি যুবক এখলাছুর রহমান কনকের মাথায় নতুন কিছু করার উন্মাদনা ভর করে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক মাছ চাষের এই নতুন প্রযুক্তি তাকে আকৃষ্ট করে।
তারই ধারাবাহিকতায় নিজেকে স্বাবলম্বি করার জন্য বেকারত্বের অভিষাপ থেকে বেরিয়ে আসার মানসে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছে।উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা ও মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ওই যুবকের বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের খামার পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেশে বেশ সাড়া ফেলেছে।
যুবকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টায় চলতি বছর এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তার বাড়ির আঙ্গিনায় ২ টি খাঁচা তৈরির কাজ শুরু করে মাছ চাষের জন্য উপযোগী করে তোলেন এবং মে মাসের ১০ তারিখে খাঁচায় মাছ ছাড়ে।সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বায়োফ্লক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।
প্রথমবারের মতো ২ শতক জমির উপর ১০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি খাঁচা বানিয়ে ৪ কেজি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়েন। পোনা ছেড়ে বাজারজাত করা পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ থেকে ১০০ দিন। প্রথম চালানে লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। প্রথম বার খাচা তৈরি, মাছ ছাড়া, মাছের খাদ্য এবং প্রতিমাসের বিদ্যুৎ বিলের খরচের দুই তৃতীয়াংশ উঠে আসবে।বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হওয়ায় কনক এই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে সফলতাও পাওয়ার আশায় প্রথমে ২ টি খাচায় মাছ চাষ শুরু করেছে।
তিনি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাবেন বলে আশাবাদি। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি বানিজ্যিকভাবে দেশি মাছের চাষ শুরু করেন। তার উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার অনেক বেকার যুবক বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।তিনি আরও জানান, প্রথমে বাড়ির আঙ্গীনায় বানিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন।
সেখানে সফলতা পেলে আগামিতে খাঁচা বাড়িয়ে বড় পরিসরে খামার তৈরি করে এ পদ্ধতিতে দেশিয় কৈ, তেলাপিয়া, পাবদা, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ চাষ করবেন।কনক আরও জানান, গত ৮ এপ্রিল ৩ ফুট উঁচু ও ১৩ ফুট গোলাকৃতির খাঁচা তৈরি করেন। খাঁচাগুলো ওয়াটার প্রুফ ত্রিপল দিয়ে ঘিরে দেন। ১টা খাঁচা তৈরি করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। একটি খাঁচায় সর্বোচ্চ ৫ হাজার শিং, কৈ, তেলাপিয়া, মাগুর ও পাবদা মাছের পোনা চাষ করা যায়। যা বাজারজাতের সময় প্রায় ২০ মন মাছ পাওয়া যাবে। একটি খাঁচায় বছরে ৩ বার মাছ চাষ করা সম্ভব।
এতে মাছের উৎপাদন বেশি হওয়ায় লাভও বেশি।এ পদ্ধতিতে মাছের খাবার তুলনা মূলক খুবই কম লাগে। অসুখ না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তিনি এখন এলাকায় মানুষের নিকট হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়। মূলত কনক ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেই ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতি মাছ চাষ করার ইচ্ছা করেন। শেষ পর্যন্ত বাড়ির উঠানে রূপায়িত হয় তার আজকের এই ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতির মাছের খামার। যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দৃষ্টান্ত।‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতি মাছ চাষ করায় জায়গার বাৎসরিক লিজের টাকা লাগে না, সার লাগে না, পাহারাদারের মাসিক বেতনের খরচ লাগে না, পরিবহন খরচ নেই, নেই কোন জেলের খরচও।
এজন্যই শতকরা ৬৫ ভাগ খরচ কম হয়। এই ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে একটি খাচায় (ট্যাংকে) সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।এখানে শুরুতে অবকাঠামোতে ব্যয় করেছেন লক্ষাধিক টাকা। এটি ছিল স্থায়ী বিনিয়োগ। এরপর মাছ চাষে যা বিনিয়োগ করছেন সেই তুলনায় লাভ পাবেন প্রায় তিনগুণ। বাড়ির উঠানে করা এই মাছের আধুনিক খামার তার ভাগ্য ফিরবে বলে তিনি আশা করেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতির এই মৎস্য খামার সম্প্রসারণে আরও অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব সাহা বলেন, ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে মাছের জন্য ওউ যুবকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে। ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে মাছের বিষয়টি আমি জানতে পেরে ঘটনাস্থর পরিদর্শন করে পরবর্তীতে করণিয় বিষয়ে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশাকরছি ওই যুবক এ চাষে সফল হবেন। আধুনিক ‘বায়োফ্লক’ পদ্ধতিতে মাছ চাষের এ অফিসের মাধ্যমে কোন প্রশিক্ষণ বা আর্থিক অনুদান আসলে জন্য ওই যুবককে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।