মাবিয়া রহমান,মনিরামপুর প্রতিনিধিঃকোথাও বন্ধ দোকানে তিনগুণ বিদ্যুৎ বিল, কোথাও মিটার না দেখেই বিলের কাগজে ইচ্ছামতো বসানো হয়েছে ইউনিট। করোনা ভাইরাসের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে এভাবেই চলছে যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-2 মনিরামপুর অফিস।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সবকিছু বন্ধ থাকলেও গ্রাহকদের একটি অংশ বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। কয়েক মাস ধরে যশোর জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল আসায় (আগের কয়েক মাসের বিলের ধারাবাহিকতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি) মানুষ ক্ষুব্ধ।
ভুতুড়ে বিলের প্রতিবাদে কেউ কেউ বিক্ষোভ করছেন। কেউ কেউ আবার অফিসে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিলে ঢুকেছে সিনবাদের ভূত। দেশে চলমান অস্থিরতায় ‘অদ্ভুত’ বিদ্যুৎ বিলের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন শত শত বিদ্যুৎ গ্রাহক।
মিটারে ব্যবহৃত ইউনিট যাই হোক না কেন; খেয়াল-খুশি মতো বিল করে ডিজিটাল মিটার স্থাপনের জন্য আবার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় গ্রাহকরা। নিয়ম না থাকলেও এই বিলের নাম দেয়া হয়েছে “এস্টিমেটেড”ইউনিট বিল। এখানে ইচ্ছামতো বসানো ইউনিটের বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রাহকদের।
জানা গেছে, উপজেলার ভরতপুর এলাকায় একটি আবাসিক বাড়ির বিদ্যুৎ বিলে গত মে মাসে ২৩৯টাকা বিল করা হয়,কিন্তু পরবর্তীতে একই মিটারে চলতি জুনে ৮২২টাকা বিল এসেছে।
এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত মাসগুলোতে আমার বিদ্যুৎ বিল ১৫০-২০০ আসতো কিন্তু এখন তা দুইগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। ।যেসব বৈদ্যুতিক জিনিস আগে ব্যবহার করতাম এখনও সেসব জিনিসই ব্যবহার করছি। তাহলে হঠাৎ কেন এক লাফে আগের চেয়ে ২গুন হলো?
উপজেলার ঘুঘুদাহ গ্রামের হাচেন আলী সরদার বলেন, বিগত মাসগুলোতে গড়ে ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে বিদ্যুৎ বিল আসতো। মে ও জুন মাসে সেই বিল এসেছে ১২৮০ ও ১৫২০ টাকা। আমার মিটারের যে ইউনিট দেখানো হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেই ইউনিট নেই। অর্থাৎ মিটার না দেখেই এতো টাকা বিল করা হয়েছে।
একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, আমার বাসার অতিরিক্ত বিল নিয়ে অফিসে গেলে অফিসের কর্মচারীরা বলেন করোনাকালিন অফিসে আসার দরকার নেই।পরবর্তীতে এমনিতেই আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি নির্দেশনায় এনালগ মিটারগুলো ডিজিটাল করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। যারা মিটার পরিবর্তন করছেন না, তাদের এস্টিমেটেড বিল করা হচ্ছে। কিন্তু নির্দেশনা মতো যাদের মিটার খারাপ হয়েছে; শুধু তারাই নতুন ডিজিটাল মিটার নিতে বাধ্য।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে আগের মাসগুলোর বিলের পরিমাণের সঙ্গে গড় করে কিছু বাড়তি ইউনিট যোগ করে গ্রাহকদের কাছে বিল দেয়া হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে গ্রাহকদের ওপর মিটার পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী মিটার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের শুধুমাত্র মিটার কিনে দিলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় বিভাগ থেকে তা কোনো ফি ছাড়াই স্থাপন করে দেয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। মিটার পরিবর্তনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক শ্রেণির দালাল। তারা মিটার রিডারদের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ বিভাগের বাড়তি বিলের কপি গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছে, মিটার পরিবর্তন না করা পর্যন্ত বাড়তি বিলের (এস্টিমেটেড) পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেও এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। মিটারের দামসহ একটি মিটার স্থাপনের জন্য নেয়া হচ্ছে দুই হাজার টাকা। অথচ বাজারে একটি ডিজিটাল মিটারের দাম এক হাজার ১২০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। এক্ষেত্রে মিটার পরিবর্তনের জন্য গ্রাহকদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকার ভাগ আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
আবার মিটার পরিবর্তনের জন্য যে এস্টিমেটেড বিল করা হয় তা সমন্বয়ের জন্য হয়রানি ও বাড়তি খরচ দিতে হয় গ্রাহকদের।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মিটার রিডার ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিদ্যুৎ বিল পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও সেটি সংশ্লিষ্টরা ভাড়াটে বা ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ করা লোকদের মাধ্যমে মিটার রিডিং ও বিল বিতরণ করে।
এবিষয় নিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর (জিএম) অরুন কুমার কুন্ডু কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সমন্বয় সেল করেছি।যদি কোন গ্রাহকের অভিযোগ থাকে তাহলে সে জানালে সাথে সাথে বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত কাজ করা হবে।