নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছায় তাবলীগ জামায়াত থেকে ইন্ডিয়া দেখার আশায় আবদুল্লাহ (১৭) ও ওবায়দুল্লাহ (১৭) নামে দুই মাদরাসা ছাত্র সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। পরে বিএসএফএর আহবানে পতাকা বৈঠক শেষে শুক্রবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে আটটায় বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। পরে বিজিবি তাদেরকে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তর করে।আব্দুল্লাহ মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গোড়াখালী পোড়াবাড়ির আব্দুল মোত্তালিব এবং ওবায়দুল্লাহ গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি উপজেলার নীলনগর আমবাগান গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। তারা এতদাঞ্চলের বিখ্যাত চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম হামিউস সুন্নাহ কওমী মাদরাসার ছাত্র। শুক্রবার (১২জুলাই) ভোর ছয়টার দিকে উপজেলা ধুলিয়ানী ইউনিয়নের শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী কাবিলপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে ভারতের মধ্যে প্রবেশ করে তারা। রাত সাড়ে আটটায় ভারতের লক্ষীপুর বিএসএফ ক্যাম্পের অধীন বয়রা সীমান্ত চৌকিতে পতাকা বৈঠক শেষে তাকে শাহাজাদপুর বিজিবির নিকট হস্তান্তর করে। এরপর বিজিবি ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান ও কাবিলপুর গ্রামের ইউপি সদস্য প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে ওবায়দুল্লাহর পিতা আব্দুর রহমান ও মাদরাসার শিক্ষকদের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।চৌগাছার আড়ারদাহ হামিউচ্ছুন্নাহ কওমী মাদরাসার ছাত্র ও তাবলীগ জামায়াতের আমির মাওলানা নূরুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার (১১জুলাই) ২৪ ঘন্টার জন্য মাদরাসার কিছু ছাত্র নিয়ে আমার নেতৃত্বে উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের বড় কাবিলপুর গ্রামের কাবিলপুর বড় জামে মসজিদে তাবলীগ জামায়াতে আসি। আজ শুক্রবার (১২জুলাই) সকাল ৯টার দিকে আমাদের মাদরাসায় ফেরত যাবার কথা ছিলো। কিন্ত ফজরের নামাজের পর কৌতুহল বশত তাবলীগ জামাতের দুইজন সদস্য ও মাদরাসার ছাত্র আব্দুল্লাহ ও ওবায়দুল্লাহ মসজিদের পাশেই অবস্থিত কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। পরে বিএসএফ তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে আমরা স্থানীয় বিজিবির সাথে যোগাযোগ করলে বিজিবি বিএসএফএর সাথে যোগাযোগ করে রাত সাড়ে আটটায় তাদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে।ভারতে চলে যাওয়া ওবায়দুল্লাহ হস্তান্তরের পর এ প্রতিবেদককে জানান, ফজরের নামাজের পর তারা হাটতে হাটতে নদীর পাশে যায়। সেখানে কপোতাক্ষ নদ খনন চলার কারনে নদের মধ্যে স্কেভটর নিয়ে যাওয়া আসার জন্য দেয়া বাঁধ দিয়ে তারা ভারত কেমন এটা দেখার জন্য ভারতের মধ্যে প্রবেশ করে।ওবায়দুল্লাহ আরো জানায়, আমরা ভেবেছিলাম কাটাতারের বেড়া পর্যন্ত যাবো। এপার থেকে ভারত দেখবো। তবে ওই অঞ্চলে যে কাটাতারের বেড়া নেই সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। পরে ভারতের মধ্যে যেতে যেতে দুইজন মহিলা ও এক পুরুষের সাথে দেখা হলে তারা জানতে চায় কোথায় যাবো। আমরা বলি ভারত দেখতে এসেছি। তারা আমাদের বলে আজ শুক্রবার বিএসএফ তেমন আসেনা। তোমরা তাড়াতাড়ি দেখে চলে যাও। আমরা হাটতে থাকলে হঠাৎ বিএসএফ সদস্যরা আমাদের ঘিরে ফেলে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে বিজিবির সাথে মিটিংয়ের পর আমাদের বিজিবির কাছে ছেড়ে দেয়।শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার শওকত আলী জানান, ঘটনার পর আমরা বিএসএফএর সাথে যোগাযোগ করি। পরে সন্ধ্যায় বিএসএফএর আহবানে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাদের দুইজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন তারা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারের উপস্থিতিতে তাদের অভিভাবক ও মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ধুলিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মোমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সকালে কৌতুহল বশত ছেলে দুইটি ভারতে ঢুকে পড়ে। পরে বিজিবি বিএসএফ পতাকা বৈঠকের পর তাদেরকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।