চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালি গ্রামে একসপ্তাহ ধরে ‘অদৃশ্য জিন’ সাপ আতংকে ভুগছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কয়েকদিনের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কথিত জিন সাপের কামড় খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।জানা গেছে, গত ১ জুলাই গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে রাতে ঘুমের মধ্যে সাপে কামড় দেয়। সে সময় বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে পার্শ্ববর্তী কালিয়াকুন্ডি গ্রামের রনৌক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। তার অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন সকালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।এ ঘটনায় কবিরাজের ওপর উত্তেজিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। এ সময় রনৌক কবিরাজ জানান, রাবেয়াকে জিন সাপে দংশন করেছে। যে কারণে চিকিৎসা দেওয়ার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। এরপর গ্রামে কথিত অদৃশ্য জিন সাপ আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত গ্রামের স্কুলশিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কথিত অদৃশ্য জিন সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়েছেন।কথিত জিন সাপের কামড়ের চিকিৎসা নেওয়া বৃষ্টি খাতুন বলেন, সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে রান্না ঘরে রান্না করছিলাম এসময় হঠাৎই শরীরে ঝিমঝিম করে মাথা ঘোরার মতো হলো। এর পরে শরীর জ্বালাপোড়া শুরু হয়।বৃষ্টির স্বজনরা জানান, ঘটনা শুনে তাকে প্রথমে গ্রামের এক মহিলা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সে হাত চালান দিয়ে দেখতে পায় তার শরীরে বিষ রয়েছে। পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা চলছে তার।গৌরচন্দ্র মন্ডল নামে আরেকজন জানান, আমি মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। এ সময় হঠাৎই মনে হলো আমার পায়ে কি যেন কামড় দিয়েছে। এর পরে আমার শরীরের মধ্যে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। আমি কালিয়াকুন্ডি গ্রামের কবিরাজ মুজিদ মেম্বারের কাছে যাই। হাত চালান দিয়ে দেখে আমার শরীরে বিষ রয়েছে। সেখান থেকেই চিকিৎসা নিয়ে বিষ মুক্ত হয়েছি।গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গ্রাম্য চিকিৎসক রিজাউল ইসলাম বলেন, জিন সাপের আতঙ্কে গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতেও পারছে না। কখন কাকে কামড় দেয় কে জানে। সবাই এখন এ আতংকে রয়েছি।তিনি বলেন, আমার বাড়িতে তিনজনকে সাপে কামড় দিয়েছে। তাদের যশোর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের লোকজন মিলে উপজেলার আড়াদাহ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিও জানিয়েছেন এটা জিনের কাজ। গ্রাম বন্ধ করতে হবে।স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কবিরাজ আব্দুল মজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো কারও চিকিৎসা দিতে যাচ্ছি না। সবাই আমার কাছে আসছে। আমিই রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিছি। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, সাপে কাটার নামে চৌগাছার ১১ জন নারী-পুরুষ বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। রোগীরা সকলেই সুস্থ আছেন। তাদের শরীরে সাপে কাটার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারা সকলেই সাপ আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।