কণ্ঠ ডেস্কঃ
প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে লি রাজবংশের শাসনের পর নতুন নেতৃত্বে পরিচালিত হতে চলেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। নতুন দিনের সিঙ্গাপুরকে দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিচালনা করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং। দুই দশক ধরে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা লি সিয়েন লুংয়ের শাসনের অবসানের পর গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন লরেন্স ওং। ঐতিহ্যবাহী লি পরিবারের বাইরে থেকে ক্ষমতায় বসা সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে দ্বিতীয় সরকারপ্রধান লরেন্স। দেশটির ৫৯ বছরের ইতিহাসে এর আগে প্রথমবার ব্যতিক্রমী এ দায়িত্ব পালন করেন গোহ চোক তং। ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গত বুধবার শপথ গ্রহণের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে লরেন্স বলেন, ‘এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব’ খ্যাত সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করব আমি। আমার লক্ষ্য থাকবে ‘আজকের দিনটির চেয়ে আগামীকালটি যেন আরেকটু ভালো করতে পারি’। পূর্বসূরিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের গড়া অতীতের ওপর ভিত্তি করেই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। তবে অবশ্যই আমরা নিজেদের মতো করে নেতৃত্ব দেব। নতুন নতুন সমস্যা জর্জর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে আমাদের। আমরা সাহসের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ভবিষ্যতের দিকে এগোব।’ দেশবাসীকে সতর্ক করে ওং বলেন, ‘এলোমেলো, ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্রমেই আরও সহিংস হয়ে ওঠা বিশ্বের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। এর জন্য সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যের মাধ্যমে নতুন নতুন পথ আলোকিত করে আমাদের শুধু টিকে থাকা নয়, সামনেও এগিয়ে যেতে হবে।’ বিশ্ব পরাশক্তিরা যখন একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গঠনে তৎপর, এমন সময়ে দাঁড়িয়ে ‘সুরক্ষাবাদ’ ও ‘জাতীয়তাবাদ’ শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি। ৫১ বছর বয়সী এ অর্থনীতিবিদ দেশটির চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ৭২ বছর বয়সী লি সিয়েনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লরেন্স। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে লুংয়ের সরে যাওয়ার বিষয়টি অনেকে লি রাজবংশের সমাপ্তি হিসেবে দেখছেন। ১৯৫৯ সালে সিঙ্গাপুর স্বাধীন হওয়ার পর লি সিয়েনের বাবা লি কুয়ান ইউয়ের ওপর ৩১ বছর ধরে দেশটির শাসনভার ছিল। মাঝে তংয়ের শাসনামল শেষে ফের দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে লি পরিবার। ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর লি সিয়েন সরে গেলে এবার দেশটির ক্ষমতায় বসলেন লরেন্স। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় নিজের কাছেই রাখবেন তিনি। তবে উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও ঐতিহ্য অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে দেশটির মন্ত্রিসভায় থাকবেন লি সিয়েন।