শিক্ষা কণ্ঠঃ এই অস্থির সময়ে দিনভর অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখলে আতঙ্কিত হওয়াটা স্বাভাবিক। করোনাভাইরাস নিয়ে ভয়াবহ সব খবর, হাজারো মানুষের মৃত্যুসংবাদ, সঙ্গে নানা গুজব তো আছেই। অথচ আতঙ্কিত না হয়ে, ঘরে বসে এই সময়টা কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারি।বছরজুড়ে সময় না পাওয়ার আপে আমরা সবাই করি। নতুন কিছু শেখা, নিজের কিছু দতা গড়ে তোলা, কিংবা পরিবারের জন্য কিছু করা—সবেেত্রই আমাদের সময় হয় না। এখন একটা লম্বা সময় তো পাওয়া গেল। সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি। নিজেকে ও অন্যকে নিরাপদে রাখতে আমরা বাসায় থাকছি। শিার্থী বা তরুণেরা এই সময়টা কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন, সেটাই বলার চেষ্টা করব।
অনলাইনে খোঁজখবরআপনি হয়তো ভিনদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিা নিতে চান। কিংবা কোনো নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে পড়ালেখার নানা সুযোগ সম্পর্কে জানতে চান। কুইজ-অ্যাসাইনমেন্ট-পরীার চাপে সেগুলো আর করা হয়ে ওঠে না। আজ না, কাল করে করে দিন গড়ায়। এখন ঘরে বসে নিজের ল্েযর দিকে এগোনোর পথগুলো সম্পর্কে খোঁজ করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য কী ধরনের নথিপত্র লাগে, প্রাথমিক যোগ্যতা কী কী, খরচ কেমন হয়—এসব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে জেনে নিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিং থাকে। কোন বিষয়ের জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভালো, জানার চেষ্টা করুন। আবার আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো পেশায় যুক্ত হতে চান, বা নিজের কোনো স্টার্টআপ চালু করতে চান, সেটা সম্পর্কেও ঘরে বসে ‘রিসার্চ’ শুরু করতে পারেন।অনলাইনে সক্রিয় আছেন—এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। ধরা যাক, আপনি পদার্থবিজ্ঞানের কোনো একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চান, আপনার আগ্রহের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একজন অধ্যাপককেই ই-মেইল করে ফেলুন না! কিংবা ধরা যাক, আপনার মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহ। লিংকড–ইনে খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কোনো গবেষকের ই–মেইল ঠিকানা জোগাড় করুন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বেশির ভাগ েেত্রই অধ্যাপক বা গবেষকেরা আগ্রহ নিয়ে ই–মেইলের জবাব দেন। আর যদি জবাব না-ও পান, তবু আপনার যোগাযোগ দতার একটা চর্চা তো হলো।বই পড়া বইয়ের তাকে ধুলো পড়ে যাওয়া বইগুলো আবার ঝেড়ে-মুছে হাতে নিতে পারেন এ সময়। অনেক বই হয়তো পড়া হয়নি, জমা পড়ে আছে। কিংবা পড়া বইটাই তো আরও একবার পড়া যায়। তা ছাড়া বিনা মূল্যে বই পড়ার জন্য বেশ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ আছে। এগুলো ব্যবহার করে হাজার হাজার বই থেকে পছন্দের বইটি খুঁজে নিতে পারেন। যেমন নুক, গুগল প্লে বুকস, ওয়াটপ্যাড, গুডরিডস, আইবুকস ইত্যাদি। বাংলা বই পড়ারও কিছু অ্যাপ রয়েছে, সেগুলো নামিয়ে নিতে পারেন। আর যাঁরা বই লেখার কথা ভাবছিলেন, দেরি কেন? আজ থেকেই শুরু করে দিন।দতা অর্জনএকবিংশ শতাব্দীকে বলা হয় সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক কাল। আর এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন নানা দতা। শেখার তো কোনো শেষ নেই, বয়সও নেই। তাই এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে, নানাভাবে নতুন নতুন দতা অর্জন করতে পারেন। অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক কোর্স শুরু করা যায়। অধিকাংশ কোর্সই বিনা মূল্যে করা সম্ভব। হার্ভার্ড, কর্নেল, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ডসহ প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিকেরা অনলাইনে কাস নেন। কোরসেরা, ইউডেমি, ইউডাসিটি, খান একাডেমি এদের মধ্যে অন্যতম। আর বাংলাদেশে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের ই-লার্নিং ওয়েবসাইট সঁশঃড়ঢ়ধধঃয.মড়া.নফ, নেতৃত্বের প্রশিণ ও একবিংশ শতাব্দীর দতা অর্জনের জন্য ী.নুষপ.ড়ৎম। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিার্থীরা অনলাইন কাস করতে ১০সরহঁঃবংপযড়ড়ষ.পড়স ব্যবহার করতে পারো। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, ক্যালিগ্রাফি, কোডিং, বিট বক্সিং, ইয়োগা, রেসিপি, পেশাগত ই–মেইল, পাবলিক স্পিকিংসহ পছন্দের বিষয়গুলো শিখতে ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন।নতুন ভাষা শেখানানা ভাষা জানাটাও বড় একটি গুণ। কারও একাধিক ভাষা জানা থাকলে তাঁর বিদেশ ভ্রমণে অহেতুক ভীতি থাকে না। সহজে বন্ধুত্বও করা যায়। তা ছাড়া একাধিক ভাষা জানা থাকলে তাঁর কাজের পরিধি অনেক বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের এই কঠিন সময়টাতেই কিন্তু আমরা নতুন করে জানলাম, দেশের সীমানা আসলে খুব বড় কিছু নয়। বড় বড় দুর্যোগে সারা বিশ্বকেই এক হয়ে কাজ করতে হয়। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংযোগ তৈরি করতে তাই ভাষা জানাটা খুব জরুরি।ভাষা শেখার জন্য অনেক অ্যাপ রয়েছে, যেগুলোতে বিনা মূল্যে ভাষা চর্চা করা যায়। এর মধ্যে অন্যতম ডুয়োলিংগো (উঁড়ষরহমড়)। আমি অবশ্য ব্যবহার করছি মেমরাইজ (গবসৎরংব) অ্যাপটি।
জীবনবৃত্তান্ত ঠিক করে নেওয়াঅনেকটা সময় চলে গেছে, কিন্তু জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি, রিজুমে হালনাগাদ করা হয়নি। এই সমস্যা যাঁদের, তাঁরা এখন সিভি বা রিজুমে ঠিকঠাক করে নিতে পারেন। পেশাগত েেত্র লিংকড–ইন প্রোফাইল ডিজিটাল সিভি হিসেবে কাজ করে। আপনার যদি পেশাগত যোগাযোগের সাইট লিঙ্কড–ইনে প্রোফাইল না থাকে, তাহলে আজই তৈরি করে ফেলুন। আর যদি প্রোফাইল তৈরিই থাকে, আজ থেকে প্রোফাইলটি সাজিয়ে নিন, নিয়মিত হালনাগাদ করুন।
অনলাইনে স্বেচ্ছাসেবা বা শিকতাস্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিার্থীরা বাসায় আছে। টিউশনও বন্ধ, তাই অনেকের পড়াশোনায় ঘাটতি পড়ছে। ভিডিও বা অডিও কলের মাধ্যমে নিজেদের গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকার শিার্থীদের বিষয়ভিত্তিক কাস নিতে পারেন। এতে করে তারা উপকৃত হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের অনলাইন স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
অনলাইনে প্রতিযোগিতা বা সম্মেলন
শিাজীবনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে শিার্থীরা খুব আগ্রহী। ডিজিটাল রূপান্তরের সুবাদে এখন অনলাইনে রচনা প্রতিযোগিতা, স্টার্টআপ প্রতিযোগিতা বা তরুণদের সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সারা বিশ্বে আপনার জন্য ছড়িয়ে থাকা নানা সুযোগের তথ্য জানতে পারেন ইয়ুথ অপরচুনিটিজের মোবাইল অ্যাপ বা ুড়ঁঃযড়ঢ়.পড়স এ।
অনলাইন শিানবিশি (ইন্টার্নশিপ)
হংকংয়ের শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর সে দেশের শিার্থীরা তাদের অবসর সময় কাজে লাগানোর জন্যঅনলাইনে ইন্টার্নশিপ করতে বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠানে ই–মেইল করে। কারণ, কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তারা ইন্টার্নশিপকে অপরিহার্য একটি বিষয় বলে মনে করে। আপনারাও এই সময়ে অনলাইনে ইন্টার্নশিপ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন। হতে পারে সেটি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কিংবা বিনা পারিশ্রমিকে। অভিজ্ঞতাই এ েেত্র বড় অর্জন। তা ছাড়া এই দুর্যোগের সময়ে ঘরে বসেই আপনি কাজ করতে চাচ্ছেন, আপনার এই মানসিকতা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠানগুলো পছন্দ করবে। ভবিষ্যতে আপনি হয়তো পাকাপাকিভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়ে যেতে পারেন।
ফিটনেস ধরে রাখার প্রচেষ্টা
‘কালই জিমে ভর্তি হচ্ছি’ অথবা ‘আগামী সপ্তাহ থেকেই ব্যায়াম শুরু করব’—এমন কথা অনেককেই বলতে শুনি। কিন্তু দেখা যায়, শুরু আর করা হয় না। এখন কিন্তু ঘরকেই ব্যায়ামাগার বানিয়ে নেওয়া যায়। ভারী যন্ত্রপাতি যে লাগবেই, তা কিন্তু নয়। খালি হাতেই বেশ কার্যকর শরীরচর্চা করা যায়। ইউটিউবে শরীরচর্চার অসংখ্য টিউটরিয়াল পেয়ে যাবেন।
টেড টকের ভিডিও
টেড টকের ভিডিও আমাদের সাধারণ জ্ঞান বাড়ানো বা নতুন আইডিয়া খোঁজার একটা দারুণ মাধ্যম। তা ছাড়া এটি আপনার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, গঠনমূলক বিনোদন ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতেও সাহায্য করবে। আনন্দের বিষয় হলো, এই ভিডিওগুলো বিনা মূল্যে তাদের ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যায়। নিজের পছন্দের বক্তা বা পছন্দের বিষয় অনুযায়ী আপনি যেকোনো বক্তৃতা শুনতে পারেন।
সব শেষে মনে রাখতে হবে, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য, দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সবাই যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো মেনে চলি এবং অন্যকে মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করি। সামাজিক মাধ্যমে কিছু শেয়ার করার আগে তথ্যটি যাচাই করে গুজব থেকে এড়িয়ে চলি। নিজে নিরাপদ থাকি, অন্যকে নিরাপদ রাখি