নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১৫ বছরে চৌগাছা উপজেলা থেকে শতাধিক হিন্দু পরিবার তাদের ভিটে মাটি বিক্রি করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই দেড় দশকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের নীরব অত্যাচারে হিন্দুরা দেশত্যাগ করেছেন বলে অনেকেই জানান। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালের পর হতে চৌগাছা উপজেলা হতে বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেশের মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ভারতে যাওয়া হিন্দুদের সংখ্যা শতাধিক পরিবার বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। আবার কেউ কেউ এই সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতে যাওয়ার দৌড়ে প্রথমে আছে উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের রানিয়ালী, বাড়িয়ালী, সুরেশ্বরকাটিসহ বিভিন্ন গ্রাম হতে দলে দলে হিন্দুরা ভারতে চলে গেছেন। গত দুই দিন এলাকা ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে এসব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান শাহিনের সময়কালে সব থেকে বেশি হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তার বাহিনীর নির্যাতন, চাঁদাবাজি বিশেষ করে হিন্দু মেয়ে ও গৃহবধূদের ওপর চালানো হয়েছে বেশি অত্যাচার। ফলে নিরীহ হিন্দুরা চলে যান ভারতে। সে সময়ে ব্যাপক হারে হিন্দুদের ওপর অত্যাচর, নির্যাতন ও ভারতে চলে যাওয়ায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রানাদাস গুপ্ত। কিন্তু কোনভাবেই যেন হিন্দুদের দেশত্যাগ ঠেকানো যাচ্ছে না। আজও তাদের ভেতরে অজানা ভয় কাজ করছে।জানা গেছে, পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালী গ্রাম হতে মহিতোষ কুমার, কৃষ্ণপদ, বিমল কুমার, অরুণসহ ১২/১৫টি পরিবার, গোবিন্দপুর গ্রাম হতে নারায়ণ চন্দ্র, সুবাসসহ ৫/৬টি, হাউলি গ্রামের জয় কুমার, পঞ্চারাম, দুঃখে রামসহ১৫ টি, মালিগাতি গ্রামের জয়কুমারসহ ৩/৪ টি, সুরেশ্বরকাটি গ্রামের পরিমল, পরামানিকসহ ৫/৬টি, বাড়িয়ালী গ্রামের দুলাল চন্দ্র, বিবিশন, তেরেলি গাইনসহ ৮/১০টি, কালিয়াকু-ু গ্রাম হতে বিজয় চন্দ্র সঞ্জয় ম-ল, আনন্দ কুমার, বাদল চন্দ্রসহ অন্তত ৩০/৩৫টি পরিবার ভারতে চলে গেছেন। এছাড়া উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের অশোক দত্ত, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামের মহাদেব, সিংহঝুলী ইউনিয়নের গরীবপুর গ্রামের অর্জুন সাহা, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের পুড়াপাড়া এলাকার সুকেশ, চ-ি, বল্লভপুর গ্রামের ষষ্ঠী কুমারসহ ১০/১৫টি পরিবার এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম হতে এই সময়ে হিন্দুরা ভারতে চলে গেছেন। পাশাপোল ইউনিয়নের মুনতাজ আলী, ওমর আলী, আবুল কালামসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা মুসলিম, যারা ভারতে গেছে এবং যারা আজও আছে তাদেরকে কখনও হিন্দু মনে করেনি, সকলেই ছিলাম ভাই ভাই। ওদের পূজা পার্বনে আমরা গেছি, আবার তারাও আমাদের উৎসবে এসেছে। তারা কেন নিজেদের দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে এটি খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, একটি সময় ছিলো হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে এটি সঠিক। তবে আমি ইউনিয়নের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার ইউনিয়ন হতে অত্যাচার নির্যাতনে হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করেছেন এর কোনই নজির নেই। চৌগাছা উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল বলেন, বিগত ১৫ বছরে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে এটি অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে দুর্বৃত্তরা হিন্দু মেয়েদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। তবে এবারের শারদীয় উৎসবে রাজনৈতিক দলসহ সকলের কাছ থেকে আমরা যে সহযোগিতা পেয়েছি তাতে মুগ্ধ। এমনই একটি বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করেছি আর এটি অব্যাহত থাকলে আমার মনে হয় হিন্দুরা আর ভারতে কখনও যাবে না।