1. jitsolution24@gmail.com : admin :
  2. shantokh@gmail.com : Sharif Azibur Rahman : Sharif Azibur Rahman

দখল এবং দূষণে বিপন্ন চিত্রা নদী

  • প্রকাশের সময় সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৮ বার সংবাদটি পাঠিত
দখল এবং দূষণে বিপন্ন চিত্রা নদী

আসাদুজ্জমান সনেট,কালীগঞ্জ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রবাহমান চিত্রা নদী অবৈধ দখলদার ও পানি দূষণের কবলে। এ নদীটি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার নিন্মস্থল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঝিনাইদহে প্রবেশ করেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হয়ে মাগুরার শালিখা হয়ে নবগঙ্গায়মিশেছে এই চিত্রা নদী।প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছে। কালীগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা চিত্রা নদী একসময় দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত ছিল। পাট কাঁটার পর পাট জাগ দেওয়া,নদীতে ধান চাষ ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং শহরের বিভিন্ন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে চিত্রা নদীর পানি দূষিত হয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ নদীর পানি ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচকাজে কৃষকের বড় সহায়। নদীর অধিকাংশ জায়গার দুই পাড় এখন অবৈধ দখলদারদের দখলে। অনেকে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করছেন। অনেকে বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ হারিয়ে ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে চলেছে। এক কালের খরস্রােত চিত্রা নদী এখন মৃত প্রায়। নৌ যোগাযোগের ক্ষেত্রে একসময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ন নৌরুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো চিত্রা নদী। লঞ্চ, ছোট স্টিমার, মালবোঝাই নৌকা নিয়মিত চলাচল করত চিত্রা নদীর বুক চিরে। নাব্য সংকটের কারণে এখন আর নৌ চলাচলের কোনো উপায় নেই। চিত্রাকে ঘিরে নৌযান চলাচলের চিত্র আজ শুধুই অতীত স্মৃতি। অবৈধ দখলদাররা প্রতিনিয়তই গ্রাম করে চলেছে চিত্রা নদীর দুই পাড়। অব্যাহত দখলের কারণে চিত্রা নদী পরিণত হয়েছে শীর্ণ খালে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এই উপজেলায় চিত্রা নদীর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এবং সচেতন মহল। বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে কিছু পানি থাকলেও শীতকালে অধিকাংশ জায়গায় জেগে ওঠে চর।আবার নদীর যে অংশে পানি থাকে সেখানকার স্থানীয় লোকেরা নদীতে বাঁধ দিয়ে রাখেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানির প্রবাহ। তখন সেচের অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় নদীর দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। নদীর দুই তীরের জমিতে উৎপাদিত পাট চিত্রা নদীতে জাগ দেওয়ার কারণে পানি পচে নষ্ট হয়ে যায়। যা মাছ উৎপাদনে প্রতিবদ্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ শহরের সব ড্রেনেজ এবং নদীতীরবর্তী আবাসন গুলোর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চিত্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত করায় দূষিত হয় এ নদীর পানি। নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ অবিলম্বে এই নদী রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে শহরের চিত্রা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের দুই ধারে দেখা যায়,নদীর মধ্যেই ভবন নির্মাণ করে সেখানে বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা হচ্ছে। ব্রীজটির ফুটপাত ঘেঁষে নদীর মধ্যে বাঁশের উপর মাচা তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে মাংস। নতুন ব্রিজের নিচে নদীর মাঝখানে পুরাতন ব্রিজের ভন্ডুল অবশিষ্ট অংশ বিচ্ছিন œভাবে পড়ে থাকায়পানি প্রবাহ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।আবার হেলাই ব্রীজ সংলগ্ন নদীর মধ্যেই কাটা হয়েছে বড় পুকুর। এই ব্রীজের মুখে নদীতে পানি থাকা অবস্থায় প্রচুর পট জমাট বেঁধে থাকে। যা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। কালীগঞ্জের সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বার বার আন্দোলন- সংগ্রাম করার পরও কেন চিত্রার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমি মনে করি সরকার নিজেই নদী দূষণ করছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশ নদী পাড়েই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শহর উপশহর। কালীগঞ্জ ও তার ব্যতিক্রম নয়।শহরের সকল ময়লাা আবর্জনা এমনকি মোবারকগঞ্জ চিনিকলের আবর্জনও নদীতে ফেলা হয়। অবস্থা এমন যে বর্তমানে কালীগঞ্জের চিত্রা নদী বড় একটি ডাস্টবিন। তাই কালীগঞ্জের পরিবেশ রক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব চিত্রা নদীকে বাঁচাতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, চিত্রা নদীকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না। চিত্রা নদীর দুই পাশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব শিঘ্রই অভিযান শুরু হবে। চিত্রা নদীকে দখল মুক্ত করা হবে।

সংবাদটি সেয়ার করে পাশে থাকুন

একই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved  2024
Design by JIT SOLUTION