বাংলাদেশ || ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

দিশেহারা কৃষক

পুকুর সাম্রাজ্য পানিবন্দি হাজার বিঘা জমি

পুকুর সাম্রাজ্য পানিবন্দি হাজার বিঘা জমি

অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করে কৃষিজমি ধ্বংসের গুরুতর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

​বাবলু মিয়া

​ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে সাবেক বিআরটিএ কর্মকর্তা মো. মঈদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করে কৃষিজমি ধ্বংসের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিগত দেড় দশক ধরে চলা এই ‘ত্রাসের রাজত্বে’ এলাকার সাধারণ মানুষ ও কৃষকরা এখন দিশেহারা।
​ঘুষের টাকায় বিশাল ‘পুকুর সাম্রাজ্য’
​স্থানীয়দের অভিযোগ,বিআরটিএ-তে কর্মরত থাকাকালীন মঈদুল ইসলাম দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। সেই অর্থ দিয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় ৭০ বিঘা ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল পুকুর। ​জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হাজার বিঘা জমি ​মঈদুল ইসলামের এই অপরিকল্পিত পুকুরের কারণে দয়ারামপুর এলাকার স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে প্রায় এক হাজার বিঘারও বেশি ফসলি জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। একসময়ের উর্বর ধানক্ষেতগুলো এখন কচুরিপানা ও পচা পানির নিচে তলিয়ে আছে। এতে কয়েকশ কৃষক পরিবার তাদের জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
​মামলা ও প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ
​এলাকাবাসীর দাবি, মঈদুল ইসলাম বিগত সরকারের প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এলাকায় নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। কোনো কৃষক পানি নিষ্কাশনের দাবি জানালে তাদের ওপর নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান,গত ১৫ বছরে প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে অনেককে ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও তার দাপট কমেনি বলে অভিযোগ করেন তারা।
​নিজে গাছ কেটে ‘মিথ্যা নাটক’ সাজানোর অভিযোগ ​অনুসন্ধানে জানা যায়,গত ৫ই আগস্টের পর তার ওপর মাত্র একদিন হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তবে সম্প্রতি মঈদুল ইসলাম নিজেই শ্রমিক দিয়ে তার পুকুর পাড়ের ড্রাগন, কলা ও পেঁপে গাছ কেটে লুটপাটের ‘মিথ্যা নাটক’ সাজিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। নিজের অপকর্ম ঢাকতেই তিনি এই কৌশল নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ​কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা
​অভিযুক্ত মো. মঈদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,"আমার সাথে যা ঘটেছে তা সত্য, এলাকার মানুষের দাবিগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। ​তবে দয়ারামপুর গ্রামের কৃষকরা দ্রুত এই জলাবদ্ধতা নিরসন এবং মঈদুল ইসলামের দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে,অবিলম্বে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে ওই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। তারা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।