মেহেদী হাসান, খুলনা
একের পর এক হত্যাকাণ্ড, সহিংসতা ও অপরাধে যখন খুলনাবাসী চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে নগরীতে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধারের খবরে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পুলিশের ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিচালিত অভিযানে চারজন আটক, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমে। কিন্তু সেই অভিযানের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটনাটি ঘুরে যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে—পুলিশই জানায়, উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামগুলো আসলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)-এর প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করা ‘ডামি অস্ত্রের’ অংশ।খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বলেন, অস্ত্রের সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় দুইটি কারখানা থেকে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। পরে জানা যায়, এগুলো বিএনসিসির প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে অভিযানের সময় দেওয়া বক্তব্যের মিল খুঁজে পাচ্ছেন না সচেতন মহল।অভিযানের সময় গণমাধ্যমকে ওসি তৈমুর ইসলাম নিজেই জানিয়েছিলেন, ওই কারখানায় অস্ত্রের ট্রিগার, ট্রিগার গার্ডসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ঢালাই করে তৈরি করা হচ্ছিল। বাটের কাঠের অংশ, স্প্রিং সংযোজনসহ অস্ত্রের একাধিক অংশ সেখানে প্রস্তুত করা হয় এবং প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি অস্ত্রের সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। এমনকি এর আগেও সেখান থেকে খুলনা ও আশপাশের জেলায় অস্ত্র সরবরাহের তথ্য থাকার কথাও তিনি উল্লেখ করেছিলেন।অভিযানকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরও দৃঢ় ভাষায় বলেন, ডিবি পুলিশের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য ছিল যে এখানে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানা রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয় এবং সত্যতাও পাওয়া গেছে। অস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ ও সাচ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন।তিনি তখন এটাও বলেছিলেন, নগরীর ভেতরে এমন একটি অস্ত্র কারখানা থাকা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং খুলনায় সন্ত্রাসী তৎপরতা যেভাবে বাড়ছে, সেখানে এ ধরনের উদ্ধার অভিযান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই সেই ‘বড় অর্জন’ পরিণত হলো ‘ভুল বোঝাবুঝি’তে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন নাজুক, তখন এমন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সাধারণ মানুষের উদ্বেগ কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। অনেকের প্রশ্ন—যদি এগুলোই প্রশিক্ষণের ডামি অস্ত্র হয়, তবে কেন প্রথমে এগুলোকে অবৈধ অস্ত্র কারখানা বলে ঘোষণা করা হলো? আবার যদি সত্যিই ভুল হয়, তাহলে তদন্ত ও যাচাই না করেই কেন এত বড় দাবি করা হলো?এই নাটকীয় ঘটনায় একদিকে যেমন পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি অপরদিকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতটা স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে কাজ হচ্ছে—তা নিয়েও নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন খুলনাবাসী।নগরবাসীর প্রত্যাশা একটাই—আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেন নাটক নয়, বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপই দৃশ্যমান হয়।










